কমিউনিটি
দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী পূর্ব লন্ডনে ‘ঐতিহ্য কালেক্টিভ’ এর

মুহাম্মদ এ এইচ খান: আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে এই প্রথম ‘আজকেরঐতিহ্য’ নামে পনোরো জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি সমসাময়িক বৈচিত্র্যময় শিল্পীকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য কালেক্টিভ’ পূর্ব লন্ডনের ইস্ট ইন্ডিয়া ডক এর ‘তাঁতি ক্রাফট হাব’এ দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক অতিথি অংশ নিয়ে এই প্রদর্শনী উপভোগ করেছেন। আজকে তারা লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সদস্যদেরকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। আজ দুপুর থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিলো। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সাঈম ভাইয়ের মেসেজ পেয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া ডক এ যখন পৌছলাম তখনও মাথার উপর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। পেছনে নদী, সামনে কৃত্রিম ঝর্ণা ও হ্রদ। সব মিলিয়ে আলো-আঁধারি ও বৃষ্টিতে এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরী হয়েছে। এই সেই ইস্ট ইন্ডিয়া ডক যেখান থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জাহাজ বাংলাদেশে গেছে। যেখান থেকে উপমহাদেশে বৃটিশ কলোনাইজেশন শুরু হয়েছে। সেইখানেই আজ দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী চলছে। ইতিহাস বুঝি ফিরে ফিরে আসছে। আয়োজকদের প্রতি মুগ্ধতা ক্রমেই বাড়ছে। মেয়ে অসুস্থ্য থাকায় সাঈম ভাই ‘ঐতিহ্য’র এই প্রদর্শনী মিস করছেন। ফোয়ারার পাশে কফি শপে বসে গরম কফির পেয়ালা হাতে একজন খবর শুনছেন। পুতিন ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংসের দাবি করেছেন, হাসপাতালে বোমা ফেলেছেন। পৃথিবী যখন বিপথগামী হয়, তখন সৌন্দর্য্যকে উপেক্ষা করতে শুরু করে মানুষ। গোলাপকে করে তাচ্ছিল্য। সেই কবেকার কথা। ১৯৬০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে তিন মাস কাটিয়ে আলোকচিত্রী মার্ক রিবু আলজেরিয়া ও সাব-সাহারা আফ্রিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ছবি তোলেন। সেই সুবাধে ১৯৬৮ ও ১৯৭৬ সালের মাঝামাঝি সময় তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে ছবি তোলার অনুমতি পান। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে পেন্টাগনের সামনে আন্দোলন চলাকালে তাঁর তোলা ফুল হাতে এক তরুণীর ছবি শান্তির আন্তর্জাতিক প্রতীকে পরিণত হয়। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বন্ধ হবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে- এই আশা নিয়ে আলো-আঁধারির রহস্য আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রদর্শনী কেন্দ্রে ঢুকে দেখি লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এমাদ ভাই দলবলসহ এসে গেছেন এবং খুব তারিয়ে তারিয়ে প্রদর্শনী উপভোগ করছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শোক সংবাদ লিখতে লিখতে ক্লান্ত মিডিয়া সেক্রেটারি হান্নান ভাইকেও মনে হলো প্রদর্শনীটা বেশ উপভোগ করছেন। ইভেন্ট সেক্রেটারি মৃধা ভাই মনের আনন্দে ভিডিও করছেন। ফটোগ্রাফার পাক্কু ভাই মোস্তফা জব্বারের মত খুব মনোযোগ দিয়ে ছবি তুলছেন। শুধু পেইন্টিং বা ফটোগ্রাফ নয় বিভিন্ন ধরণের দেশীয় প্রডাক্টও এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রদর্শিত হয়েছে চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, চারুশিল্প, ভাস্কর্য, টেক্সটাইল, পেইন্টিং, হস্তশিল্প, কস্টিউম, স্কাল্পচার ও প্রপ। আমাদের নতুন প্রজন্মের পনেরো জন বৈচিত্র্যময় শিল্পী মনের মাধুরী মিশিয়ে যে যা পেরেছেন এখানে তা প্রদর্শন করেছেন। প্রদর্শনীটিকে তাই কেউ একের ভেতর পনেরোও বলছেন। অংশগ্রহণকারী শামা কুন, জুবায়ের হোসাইন, বৃষ্টি আলম, জান্নাত হুসাইন, সুমাইয়া খান, পি’র ডিয়োরাম, নিহা মিয়া, রুকিয়া উল্লাহ, আনিকা দেব, লাইসুল হক, লাইলা ইমান জাসাল, মোহাম্মেদ আদেল, রাহেমুর রহমান, ফাওজিয়া রহমান ও আনুশা আলমগীর- এই পনেরো জন শিল্পীর মধ্যে কেউ ফাইন আর্টসে পড়াশোনা করেছেন, কেউ গ্রাফিক ডিজাইন এন্ড ইলাস্ট্রেশনে পড়াশোনা করেছেন, কেউ ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়াশোনা করেছেন, কেউ ফটোগ্রাফিতে পড়াশোনা করেছেন, কেউ ফিল্ম মেকিংয়ে পড়াশোনা করেছেন, কেউ আবার অনার্স (সন্মান) শেষ করে একই বিষয়ে মাস্টার্স করছেন। কেউ কেউ কনটেম্পরারি ফটোগ্রাফি, প্রেকটিস এন্ড ফিলোসফিতে মাস্টার্স করছেন। শিল্পীদের কেউ কেউ লন্ডন ফ্যাশন উইক, ইন্টারন্যাশনাল উইক, বড় বড় শহরের নামীদামি জাদুঘর ও গ্যালারিসহ জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। সন্মাননা পেয়েছেন ও নানা পুরস্কার জিতেছেন।
এই তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা মাথায় অনেক অনেক আইডিয়া নিয়ে ঘুরছেন। জোবায়ের হোসাইনের কথাই যদি বলি, জোবায়ের হোসাইন একজন বৃটিশ বাংলাদেশি ফিল্ম মেকার এন্ড আর্টিস্ট। তিনি বাংলাদেশে গিয়ে বেশ কিছু ছবি তুলে এনেছেন। সেখান থেকে বাছাইকৃত ছবিগুলো তিনি এই প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করছেন। জোবায়ের হোসাইন ডিজিটালি কাজ করেন না। তার সব ছবিগুলো ফিল্মে তোলা। ফ্লাশব্যাক বা স্মৃতিগুলো যেমন সাদা কালো হয় তেমনি জোবায়ের হোসাইনের সবগুলো ছবিই ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট। বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে তিনি যেটুকু সময় পেয়েছেন, ওইটুকু সময়ের মধ্যেই তিনি এই ছবিগুলো তুলেছেন। তিনি বাঙালির শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাস জড়িত ও বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গুণী মানুষদের আড্ডার কেন্দ্র পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডং এর ছবি তুলে এনেছেন। বিউটি বোর্ডিং এর জন্মলগ্ন থেকেই এখানে আড্ডা দিতেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চিত্র পরিচালক, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিউটি বোর্ডিং বাড়িটি ছিল নিঃসন্তান জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে সেখানে ছিল সোনার বাংলা পত্রিকার অফিস। কবি শামসুর রহমানের প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয়েছিল এ পত্রিকায়। দেশ ভাগের সময় পত্রিকা অফিসটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে দুই ভাই প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলিনী মোহন সাহা এই বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন বিউটি বোর্ডিং। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে বিউটির নামেই এর নামকরণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বিউটি বোর্ডিংয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহাসহ ১৭ জন। পরবর্তীতে প্রহ্লাদ চন্দ্রের পরিবার ভারত গমন করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে প্রহ্লাদ চন্দ্রের স্ত্রী শ্রীমতী প্রতিভা সাহা দুই ছেলে সমর সাহা ও তারক সাহাকে নিয়ে বিউটি বোর্ডিং আবার চালু করেন। বিউটি বোর্ডিংয়ের মুখর আড্ডা আগের মতো না থাকলেও খাবার ঘরে এখনো খদ্দেরের ভিড় লেগেই থাকে। নগরের ভোজনরসিকরা এখনো এখানে ছুটে আসেন। জোবায়ের হোসাইন বাংলাদেশের এরকম ১১টি ছবি এখানে প্রদর্শন করছেন। প্রতিটি ছবির নেপথ্যে উঠে এসেছে আনন্দ-বেদনা কিংবা উচ্ছ্বাসের অভিযাত্রা। আছে যাপিত জীবনের বহুমাত্রিক চালচিত্র। প্রত্যেক ছবির পেছনেই আছে এরকম হাজারো গল্প। তিনি সেই গল্পগুলোকে অর্থাৎ এই সব ছবির ভেতর থেকে যে আওয়াজগুলো শোনা যাবে ওইসব আওয়াজগুলো নিয়ে একটা সাউন্ড পিস তৈরী করেছেন। এক মিনিটের এই সাউন্ড পিসে দর্শনার্থীরা ছবির পেছনের গল্পের পাশাপাশি বাংলাদেশের অনেক আওয়াজ শুনতে পাবেন। এটার ভেতরে দেশের রাস্তার জঞ্জাট, মন্দিরের ঘন্টি, মিলাদের আওয়াজ, দুর থেকে ভেসে আসা গান, টুকরো টুকরো কথা ইত্যাদি নানা কিছু অনুভব করবেন। দর্শনার্থীরা কিছুক্ষণের জন্য নস্টালজিক হয়ে যাবেন। জোবায়ের হোসাইন তার অডিয়েন্সদের এই এক্সপেরিয়েন্সটাই দিতে চেয়েছেন যে, এক মিনিটের জন্য হলেও দে ক্যান গো ব্যাক টু বাংলাদেশ।
সাসটেইনেবল ফ্যাশন ডিজাইনার শামা কুন ২০১৩ সাল থেকেই ‘ঐতিহ্য কালেক্টিভ’ এর সাথে কাজ করছেন। তিনি মানুষের ফেলে দেওয়া কাপড়কে নতুন করে তৈরী করছেন, পুর্নব্যবহারের উপযোগী করে তৈরী করছেন, রিইউজ ও রিডেকোরেট করছেন। এই প্রদর্শনীতে তিনি পুরাতন শাড়ি দিয়ে একটা জ্যাকেট ডেকোরেট করে ও পুরাতন লুঙ্গি দিয়ে একটা ম্যাট তৈরী করে প্রদর্শন করছেন। নতুন কাপড় তৈরীতে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে বিধায় মানুষ যে কাপড়গুলো ব্যবহারের পর ফেলে দেয় এবং যে কাপড়গুলো পরিবেশের ক্ষতি করে, তিনি সেগুলোকে দিয়েই নতুন নতুন পোশাক তৈরী করেন। পুরনো লুঙ্গি দিয়ে নকশী কাঁথা বানানোর আইডিয়াটাই তিনি এখানে ব্যবহার করেন। এছাড়া বাংলাদেশি যত ট্রাডিশনাল ক্রাফট আছে, ওখান থেকেই তিনি তার আইডিয়াগুলো নেন। ফেলে দেওয়া কাপড় যেহেতু মাটির ক্ষতি করে তাই এটা শুধু তার কাছে ডিজাইন না, এটা একইসাথে তার সোশ্যাল ওয়ার্ক এবং পরিবেশ সচেতনতা বলে তিনি মনে করেন। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করা শামা কুন কড়াইল বস্তির ১৩ জন নারীকে এই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বাংলাদেশে মানুষের ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে তারা নতুন নতুন পোশাক তৈরী করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন। শামা কুন প্রত্যেকটা পোশাক ডিজাইন করার আগে এমন কিছু চিন্তা করেন যাতে এটা পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে। তিনি বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলে খ্যাত পাট দিয়ে মেয়েদের অসাধারণ একটা পোশাক তৈরী করেছেন। দেশে বিদেশের অনেকেই তার তৈরী এই পোশাকটা পছন্দ করেছেন। পাট মাটিতে পচে যায় এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না বলে তিনি এখন পাট নিয়ে অনেক বড় একটা পরিকল্পনা করছেন। তিনি এটার জন্য ফান্ডিং করতে পারেন এমন কিছু বিনিয়োগকারী খুজছেন। আমাদের বাংলাদেশে যেহেতু বিউটিফুল ক্রাফট আছে; কাজেই তার আইডিয়াই হলো বাংলাদেশি ক্রাফট নিয়ে কাজ করা, এবং এটাকে মেইনস্ট্রিমে তুলে ধরা।
লাইসুল হক একজন ট্রান্সডিসিপ্লিনারি ইমেজ মেকার। তিনি এখানে লবণ এবং চিনির একটি প্রিন্ট ইমেজ উপস্থাপন করেছেন। লবণ আর চিনি দু‘টোই সাদা। লবণ আর চিনির ছবি তুললে বুঝা যায় না কোনটা চিনি আর কোনটা লবণ; কিন্তু লবণ আর চিনি তো এক জিনিস না। চিনি এবং লবণের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এদের রাসায়নিক গঠনে। চিনি ও লবণ ভিন্ন ভিন্ন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত। খাবার চিনির রাসায়নিক নাম সুক্রোজ। আবার খাবার লবণের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। কাজেই চিনি ও লবণ দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও এদের বৈশিষ্ট্য মোটেও এক না! কিন্তু ছবিতে তো আর এসব কিছু বোঝা যায় না। ভিডিও করার সময় পোস্ট প্রসেসিংয়ে বা পরে সেখানে যে কোন কিছু বসানোর জন্য আমরা যেমন গ্রীণ স্ক্রিণ বা নাল স্পেইস ব্যবহার করি; লাইসুল হক তেমনি চিত্র শিল্পে গ্রীণ স্ক্রিণ ব্যবহার করে লবণ ও চিনির ছবি তুলে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ফটোগ্রাফিকে কিভাবে ক্রিটিক বা সমালোচনা করা যায় সেটাই তিনি এখানে প্রদর্শন করছেন।
আমাদের নতুন প্রজন্মের এরকম পনেরো জন শিল্পীর প্রত্যেকেই তাদের মৌলিক শিল্পকর্ম এই প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করেছেন। একজন শিল্পী তৈল চিত্রে খুব ভালো পেইন্ট করে এনেছেন তো অন্য জন শিল্পী হাতে বোনে বাংলাদেশের একটা মানচিত্র তৈরী করে প্রদর্শন করেছেন। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাননীয় হাই কমিশনার প্রদর্শনীতে এলে হাই কমিশনের দেয়ালে ঝুলানোর জন্য তিনি এটা তার হাতে তুলে দিবেন বলে জানিয়েছেন। ঐতিহ্য কালেক্টিভের ডিরেক্টর এন্ড ট্রাস্টি মাহের আনজুম বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশে অনেক ট্রাডিশন আছে, অনেক হেরিটেজ আছে আর্টের ওপরে কিন্তু লোকে কেউ জানেনা সেটা। বিশেষ করে এদেশে অনেকেই জানেনা যে, আমাদের এত রিচ ট্রাডিশন আছে। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে, মেইনস্ট্রিমের কাছে এগুলো তুলে ধরতে চাই। এখানকার সমসাময়িক বৃটিশ বাংলাদেশি আর্টিস্টরা কী কাজ করছে মেইনস্ট্রিমে আমরা তা উপস্থাপন করতে চাই। আমাদের নতুন প্রজন্ম যে কত সুন্দর সুন্দর কাজ করছে আমরা তা দেখাতে চাই। আমাদের নতুন জেনারেশনকে এর সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে চাই। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা মিলে সাউথ এশিয়ান বিভিন্ন ইভেন্ট হয় লন্ডনে। বাংলাদেশের জন্য এরকম ইভেন্ট খুব একটা হয়না। ভবিষ্যতে আমরা আরও এরকম ওয়ার্কশপ করতে চাই। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সভাপতি শিল্প ও সংস্কৃতি মনা এমাদ ভাই প্রদর্শনীতে ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের শিল্পকর্ম ও সৃষ্টিশীলতা দেখে তাদের উৎসাহিত করেছেন। টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল থেকে দুই শিল্প ও সংস্কৃতি মনা মানুষ মেয়রের পলিটিক্যাল এডভাইজার মনসুর ভাই ও মিডিয়া অফিসার মাহবুব ভাই দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী দেখে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী শিল্পীদেরকে নিজেদের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে গেছেন। শিল্পীরা প্রদর্শনীতে এই তিন জনকে দেখে খুশি হয়েছেন, আনন্দিত হয়েছেন। উনাদের মত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র জন বিগস এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমও তাদের প্রদর্শনী দেখতে আসবেন বলে শিল্পীরা আশা করছেন।
মাদক যখন আমাদের বৃটিশ বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে খুবলে খাচ্ছে। মরণ নেশা হেরোইন, কোকেন, আইস ড্রাগ, ড্রাগ ফাইট, গ্যাং ফাইট যখন এই বারায় বাড়ছে। গত কয়েক বছরে অনেক তরুণ যখন এসবে জড়িয়ে মারা গেছে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘অপারেশন কনটিনিয়াম’ এর মাধ্যমে যখন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৯ জন ড্রাগ ডিলারকে গ্রেফতার করেছে। আমাদের বৃটিশ বাংলাদেশি তরুণরা যখন অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম, অপরাধে জড়াচ্ছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ যখন যুক্তরাজ্যে সর্বনাশা মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। তখন তরুণদের নিয়ে ‘ঐতিহ্য কালেক্টিভ’ এর এই উদ্যোগ আমার খুবই ভালো লেগেছে। তরুণদের হাতের কাজ ও সৃষ্টিশীলতা আমাকে খুবই আশাবাদী করেছে। নিয়মিত এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে বিলেতে দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মেইনস্ট্রিমে তুলে ধরছে, সৃষ্টিশীলতায় আমাদের কমিউনিটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিচ্ছে, এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। বাঙালির জীবন যাত্রার বিভিন্ন দিক, দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরাটা, শিল্পিতভাবে তুলে ধরাটা একটা নতুন ধারণা। এটা চর্চার মাধ্যমে আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিজেদেরকে মাদক প্রজন্ম নয় বরং সম্ভাবনাময় একটি প্রজন্ম হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিজেদেরকে তুলে ধরবে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে বলে আমি মনে করি। আশাকরি, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মাননীয় মেয়র জন বিগস ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার হিজ এক্সেলেন্সি সাঈদা মুনা তাসনিম প্রদর্শনীটি দেখতে যাবেন এবং আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এরকম সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহিত করবেন।
রিপাবলিক লন্ডন ও ট্রাম্পেরী ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রদর্শনীটি পরিচালনা করছেন ‘ঐতিহ্য কালেক্টিভ’ এর কো-ফাউন্ডার, ডিরেক্টর এন্ড ট্রাস্টি মাহের আনজুম, আর্টস ম্যানেজার এন্ড কিউরেটর নদী নিরঞ্জনা, পি’র ডিয়োরাম ও শামা কুন।
প্রদর্শনীটি গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সোমবার আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে শুরু হয়েছে এবং আগামী ২৬শে মার্চ শনিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত চলবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা এবং শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া পূর্বনির্ধারিত যোগাযোগের ভিত্তিতে প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।



