বাংলাদেশ

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর

প্রকাশিত : undefined

মহাজাগতিক সফরে যাত্রা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর। তিনি অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ১৩ জুলাই ২০২২ বুধবার যুক্তরাজ্যের ডেভনের স্থানীয় টরবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১.১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের ডেভনস্থ এক্সিটার জামে মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা শেষে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদর্শন করে জাতীয় পতাকা দিয়ে কফিন আচ্ছাদিত করা হয়।

এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে রাষ্ট্রদূতের লেখা শোকবাণী পাঠ করেন তার প্রতিনিধি এ এফ এম জাহিদ উল ইসলাম (মিনিস্টার পলিটিক্যাল)।

যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে এক্সেটারের স্থানীয় এক্সউইক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি,
আবু নঈম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেটে। বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পৈত্রিক আদি নিবাস ছিল সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা গ্রামে। মা মরহুমা মুহিবুন্নেছা খানম। বাবা মরহুম মৌলভী মো. আয়াতউল্লাহ। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার বোনেরা হলেন—মরহুমা শামসুন নাহার, নুরুন নাহার (শিক্ষক), কামরুন নাহার (শিক্ষক), লুৎফুন নাহার মনি (শিক্ষক), জেবুন নাহার (গৃহিণী), গুল নাহার রুনা (গৃহিণী)।
ভাই আবু জাফর মোহাম্মদ শহিদুল্লা(শিক্ষক)।

সহধর্মিনী ওয়াহিদা আবদুল্লাহ, এক পুত্র এবং দুই কন্যা নিয়ে ছিল তার পরিবার। তার সন্তানেরা হলেন—যুক্তরাজ্যে বসবাসরত শাহরিয়ার আবদুল্লাহ (চলচ্চিত্র নির্মাতা), ঈশিতা আবদুল্লাহ (মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ) এবং টিয়ানা আবদুল্লাহ (রিক্রুটমেন্ট এক্সিকিউটিভ)। প্রখর বুদ্ধিমত্তা আর দেশপ্রেম ছিল আবু নঈম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীরের। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সময়ে তিনি কিশোর বয়সেই দেশরক্ষার কাজে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাহারা দিতেন এলাকার যুবকদের সাথে। তিনি ছিলেন বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ছোটদের প্রতি স্নেহশীল একজন মানুষ। তার স্বতঃস্ফূর্ত বুদ্ধি পরামর্শ সচেতনতা বড়দেরও অভিভূত করত। লেখাপড়ায় তিনি এগিয়ে থাকতেন। আর মায়া-মমতায় জড়িয়ে পরিবারের সবাইকে ভালবাসে থাকার প্রচেষ্টা ছিল তার সবসময়।

শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন
আবু নঈম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর মতিঝিল সেন্ট্রাল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে শ্রুজবারী টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করেন। এরপর লন্ডন সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশল শাস্ত্রে বিএসসি, এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন এবং পরবর্তীতে এমবিএ সম্পন্ন করেন।

শিক্ষাজীবন শেষ করে এএনএম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর যুক্তরাজ্যের ক্যামডেন, রেডব্রিজ ও ওয়ান্ডসওয়ার্থ কাউন্সিলে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে হেরিংগে কাউন্সিলের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

লন্ডনের অনেক ‘আইকনিক’ স্থাপনার ডিজাইনার তিনি। লন্ডনের বিখ্যাত ইউস্টনের আন্ডারপাস ও নর্থ সার্কুলার রোডের ওপর নির্মিত ফ্লাইওভারের ডিজাইন তিনি করেছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
আবু নঈম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধ করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে গণভবনে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আয়েজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি যোগদানের গৌরব অর্জন করেন। এত অল্প বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ায় সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু তার সাহসিকতা ও বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

পরিবার-পরিজনসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন আবু নঈম মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর। পরম করুণাময় তার সকল ভালো কাজ সৎকর্ম হিসেবে কবুল করুন। আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

এ সম্পর্কিত অন্যান্য সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Close