বিনোদন

স্বপ্ন মৃতুঞ্জয়ী (এক)

পৃথিবীতে সব ক্ষণজন্মারাই কমবেশী ইমোশনাল এবং খুব রাগী হয়ে থাকে। সাত্তার সাহেবের দুই সন্তান আরজু ও বাবুইয়ের মধ্যে এই মানবিক গুণাবলী রয়েছে। দুজনেরই গানের কন্ঠ অসম্ভব রকমের ভালো। নিজের স্ত্রীকে বিয়ের পর গুনগুন করতে দেখে নিজেও শিখে ফেলতো তিন ব্যাটারির ট্রায়ানজিষ্টারে শুনে শুনে জগন্ময় মিত্র কিংবা সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের গান “ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে, তোমারে করেছে রানী” “জীবনে যদি দ্বীপ জ্বালাতে নাহি পারো, সমাধি পরে মোর জ্বেলে দিও”!

উনসত্তুরের গণ অভ্যুত্থান পূর্ব বাংলার মানুষকে তাদের স্বাধীকার অর্জনের জন্য যেভাবে জাগিয়ে তোলে, তাতে শুধু নেতার আদেশের অপেক্ষায় দিন গুনছিলো বারুদে আগুন লাগবার সময়টার!

বাবুইয়ের গানের পাগলামীকে নিয়ে আরজুর আক্ষেপ থাকলেও ভাইয়ের অসাধারণ এই গুনে মুগ্ধ না হয়ে পারতোনা। কারন গানটা যে তার মধ্যেও ঝড় তোলে ক্ষনে অনুক্ষনে। তাই বাবুইকে নিয়ে আলাদাভাবে গানে গানে খেলায় খেলায় পড়াতে শুরু করলো আরজু। বাবুইয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিন স্কুলে গিয়েও শান্তি পাচ্ছিলোনা সে। বাবুই অংক ঠিকমত করতে পারলো কিন। ইংরেজির যে বিষয়গুলো শেখানো হয়েছে সেগুলো থেকে সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারলো কি পারলোনা ভেবে ভেবে প্রতিটি ক্লাশের পর মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলো। বাবুইয়ের বাংলা নিয়ে চিন্তাটা ছিলোনা আরজুর। কারন মুখে মুখে নতুন নতুন ছড়া থেকে শুরু করে ছোট ছোট কবিতা এমনভাবে মুখস্ত ছিলো তার যে আরজু বাংলা পড়াতে বসলে শুধুমাত্র লিখার ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখতো।

সাত্তার সাহেব বড় ছেলে মজনুকে স্কুলে দিয়ে অফিসে যাবার পথে আরজু ও দিলুকে আজিমপুর গার্লস স্কুলে নামিয়ে আবার ফেরার পথে দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফিরত। আজকে বাবুইয়ের ভর্তি পরীক্ষা তাই সাত্তার সাহেব অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। মজনুর আজ স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার কারনে ছুটি। বাবার সাথে হেটে হেটে বাবুইকে স্কুলে পরীক্ষার জন্য পৌঁছে দিয়ে ময়না বুদের বেকারী থেকে ব্রেড, টোস্ট বিস্কিট কিনে বাড়ি ফিরলো বাপবেটা। ছোট ভাইয়ের পরীক্ষা যেনো ভালো হয় সেইজন্য কাউকে না জানিয়ে রোজা রেখেছে আজ মজনু। বাবা ছেলে বাসায় ফিরলে টেবিলে সকালের নাস্তা দিতেই মজনুর রোজা রাখার কথা শুনে স্বামী স্ত্রী দুজনের চোখেই অশ্রু। শামসুন নাহার ওরফে “ফকু” ছেলেকে বহুভাবে রোজা ভাঙানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষে নিজেরা নাস্তা সেরে উঠলো।

ফেরদৌস ও শিউলিকে মজনুর কাছে বসিয়ে রেখে দুপুরের খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত হবার আগেই মজনুর ইফতারের আয়োজন মোটামুটি সারতে লাগলো। এদিকে কোন ফাঁকে স্বামী তার বাজার নিয়ে ফিরে এসেছেন খেয়ালই করেননি।

আব্দুস সাত্তার:

শুনছো, আজকে পোলাও আর গরুর মাংসের সাথে চিংড়ির দোপেঁয়াজা করবে। বাবুই চিংড়ির দোপেঁয়াজা খেতে ভালোবাসে।

শেষের কথাগুলো কেমন গুনগুন করে বলেই বাবুইকে স্কুল থেকে নিয়ে আসবার জন্য জুতা পরছিলেন সাত্তার সাহেব। মজনু কখন বাবার সাথে ভাইকে স্কুল থেকে আনবার জন্য তৈরী হয়ে দাঁড়িয়েও আছে।

শামসুন নাহার:

এই বোকা, তুইনা রোজা রেখেছিস? এখন আর তোকে হেটে হেটে স্কুলে যেতে হবেনা। তুই আয় ভেতরে, বসে বসে দোয়া পড়বি।

মজনু:

না, আমি যাবো।

সাত্তার সাহেব মজনুর হাত ধরে রওনা দিলেন স্কুলের দিকে। ময়না বুদের বেকারীর কাছে আসতেই রহমত চাচা (ময়না বুর বাবা) দাঁড় করালেন দুজনকে।

রহমত চাচা:

সাত্তার সাব, যাওনের সুময় কেক লিয়া যাইয়েন। পোলাপানের লাইগ্যা ফ্রেস কেক বানাইছি।

সাত্তার সাহেব:

ঠিক আছে ভাইজান, যাবার সময় নিয়ে যাবো।দ্রুতপায়ে হেটে চলে সাত্তার সাহেব ছেলে মজনুর হাত ধরে। সন্তান পিতামাতার কাছে কতটা অমূল্য ধন, সন্তান জন্ম না নেয়া অবধি কোনো মানুষই তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনা।

চলবে….

ফজলুল বারী বাবু,

১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং,

সকাল: ১১:৩০ মি:

ইলফোর্ড, লন্ডন।

এ সম্পর্কিত অন্যান্য সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরও দেখুন...

Close
Close