বিনোদন

স্বপ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী

“Jiya bekarar haye, achcha iye bahar haye” গানটি বেজেই চলেছে মাইকে। বাবুই পড়তে পারছেনা। তার কানে শুধুই গানটির সুর, তাল, ছন্দ উত্তাল স্রোতের মত বারবার ছুটে আসছে। গায়িকার কণ্ঠের মাদকতা যেনো বাবুইকে চুম্বকের মত টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে তার দিকে বারবার। হঠাৎ হুঙ্কার,”ঐ তুই চুপ করে আছিস কেন, পড়ছিসনাযে”?

বড় আপা আরজুর ধমকে শুধু বাবুই নয় পড়ার টেবিলের চারপাশের অন্যান্য দুইজন দিলরুবা ও মজনুকেও নাড়িয়ে দিলো। দিলরুবা দ্রুত থেকে দ্রুততম গতিতে গুনগুন করে ইতিহাস পড়তে লাগলো। মজনু গলা ছেড়ে নামতার ঝামটা দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলতে লাগলো। বাবুইয়ের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। তার কানে “জিয়া বেকারার হায়ে” ছাড়া আর কিছু ঢুকছেই না। দুর থেকে আরজু, দিলু, মজনু ও বাবুইয়ের মা ব্যাপারটি লক্ষ্য করে খুব ধীরপায়ে পড়ার টেবিলের কাছে এসে বাবুইকে সযত্নে ছো মেরে নিয়ে গেলো।

আরজু:
তোমার আশকারা পেয়ে বাবুই একদিন মূর্খই থেকে যাবে মা। সামনের জানুয়ারিতে স্কুলে দিতে চাইছো, ইহজন্মেও এই গানের পোকা তোমার স্কুলের মুখ দেখতে পারবে না।

মা শামসুন নাহার কেনো তার স্বামী আব্দুস সাত্তার সাহেবও এই মেয়েকে যমের মত ভয় পায়। বেচারা সাত্তার সাহেব মেয়ের ভয়ে রাতের খাবার শেষ করে নওয়াবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি পার হয়ে গুদারা ঘাট অব্দি হেটে যায় একটা সিগারেট পান করতে। আরজু এবার ক্লাস অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আরজুকে সমস্ত স্কুলের মনিটর বানিয়ে দিয়েছে। একটি ছাত্রীও তাদের ইচ্ছেমত বাঁদরামি করবার সুযোগ পায়না। আরজুর সর্বত্র পদচারনায় সেই সুযোগ বঞ্চিত আজিমপুর গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের বাবা মায়ের কাছে আরজু এক বিশাল উদাহরন।

এমন কঠিন মেয়েটি ঠিক সময়মত আবার প্রত্যেকের কাছে অতন্ত্য প্রিয়। যেমন স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় ধরে ধরে সব ছাত্রীকে অংশগ্রহনের জন্য শুধু উৎসাহ দেয়াই নয়, তাদেরকে ড্রিল টিচারের সাথে থেকে কার কোন জায়গায় ত্রুটি খুটে খুটে বের করে তাদের তৈরি করায় প্রত্যেকটি ছাত্রীর কাছে আরজু প্রিয় বড় আপু, নয় প্রিয় বান্ধবী। উপরের শ্রেনীর ছাত্রীদের অনেকেই আরজুর কাছে নত হতে না চাইলেও তার গানের টানে আরজু তাদের আদরের ছোট বোন হয়ে যেতো নিমেষেই।

বাবুই মায়ের কোলে শুয়ে মাইকে গান শুনেই চলছে। মা শামসুন নাহার বাবুইয়ে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। এর অর্থ,”তোমাকে বাঘের মুখ থেকে এনে গান শুনবার সুযোগ করে দিয়েছি এমনি এমনি নয়, মাইক বন্ধ হলে গান তোমাকে শোনাতে হবে”! অদ্ভুত ব্যাপার বাবুই মাইক বন্ধ হতেই গুনগুন করে মাকে শোনাতো পুরো গানটি। কিভাবে সম্ভব একবার দুবার শুনেই এমন সুরেলা গান কথাসহ আয়ত্ব করে ফেলা।

চলবে….

ফজলুল বারী বাবু,
১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং,
ইলফোর্ড, লন্ডন।

এ সম্পর্কিত অন্যান্য সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরও দেখুন...

Close
Close